বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক :
ব্যস্ত নাগরিক জীবনে প্রতিদিন আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেসব সমস্যার মাত্রা কখনও হয় বেশি, আবার কখনও কম। অনেক সমস্যা আমাদের গা-সহাও হয়ে গেছে। এর মধ্যে যানজট একটি।
তবে কিছু সমস্যা আমাদের এতটাই কষ্ট দেয় যে তা মাঝে মাঝে অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। এমন একটি সমস্যা হল জলবদ্ধতা। এর প্রভাবে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
বর্তমানে মাত্র এক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতেও কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। সামান্য বৃষ্টিপাতে শহরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা তলিয়ে যায়। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো থেকে শুরু করে অলিগলিও বাদ থাকে না। সব জায়গায় পানি জমে যায়। কোথাও কোথাও প্রায় নদীর রূপ নেয় বৃষ্টির পানি।
সেই পানি সরতে সময় লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে সাধারণ মানুষ পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগে। জলাবদ্ধতায় শুধু যে মানুষের দুর্ভোগ হয় তা নয়, এর সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক বিষয়ও। রাজধানীর সড়কে এ ধরনের জলাবদ্ধতার অর্থ হল দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়া। সেটাই হচ্ছে আমাদের ক্ষেত্রে।
রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার পেছনে রয়েছে নানা যৌক্তিক কারণ। প্রধান কারণ হল অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে দেড় কোটি মানুষের এই রাজধানী। খালগুলো ভরাট করে পরিকল্পনাহীনভাবে বাড়িঘর ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ছোট-বড় নালা-নর্দমা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর নিুাঞ্চল পানিতে ডুবে যাচ্ছে। রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নাজুক অবস্থা এর অন্যতম কারণ।
এখানে নেই কঠিন বর্জ্য অপসারণের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক উপযুক্ত ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডাস্টবিন ও কনটেইনার। নামমাত্র যা আছে সেদিকেও সুদৃষ্টি নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে ময়লা উপচে রাস্তার পাশে উন্মুক্ত ড্রেনে গিয়ে পড়লেও ব্যবস্থা নেয়া হয় না; বরং ড্রেনের সুয়ারেজ প্রবাহ বন্ধ হয়ে সৃষ্টি করে জলাবদ্ধতা। তাছাড়া রাজধানীর অর্ধেকের বেশি এলাকা এখনও ওয়াসার ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের আওতায় আসেনি। আগে বৃষ্টির পানি সরার ক্ষেত্রে নদী ও খালগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখত। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। রাজধানীর নালা-খালসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা। সবার আগে রাজধানীর জলাবদ্ধতা রোধে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনে বক্স কালভার্ট নির্মাণ, খাল উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য হারিয়ে যাওয়া খাল-নদীগুলোকে দখলমুক্ত করতে হবে। যথাযথ সংস্কার করে খাল-নদীগুলোতে জলাধার সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া খাল-নদী খনন, খালের তলদেশে জমাকৃত বর্জ্য এবং স্পয়েল অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্র্থীরা সর্বপ্রথম যে বিষয়ে আশ্বাস দেন সেটা হল জলাবদ্ধতা নিরসন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তারা সব ভুলে যান। এবার রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নতুন দুই মেয়র পেয়েছে নগরবাসী।
নাগরিকদের বিশ্বাস, এবার নতুন মেয়ররা জলবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্তি দেবেন। তবে এটাও সত্যি, সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান এবং নগর প্রশাসন থেকে শুরু করে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা।